যেসব কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়
বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়েছে, এবং এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে প্রধান কারণগুলো হলো:
শারীরিক অনিয়মিত জীবনযাপন: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম না করলে ওজন বেড়ে যায়, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন): অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হার্টের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
বংশগত কারণ: অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ থাকলে এ রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই কারণগুলির কারণে হার্ট অ্যাটাক বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের জন্য একটি সাধারণ ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে কিছু জীবনধারাগত পরিবর্তন এবং সঠিক অভ্যাস অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
প্রতিদিনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার (যেমন মাছ, বাদাম), এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (অলিভ অয়েল) অন্তর্ভুক্ত করুন। লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম গ্রহণ করুন। এগুলি কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বাড়ায়। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন: ওটস, ব্রাউন রাইস, ওয়ালনাট হৃদস্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২. নিয়মিত ব্যায়াম:
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করুন। হাঁটা, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম বা সাইক্লিং করতে পারেন। ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন কমায় এবং হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ওজন হার্টের ওপর চাপ বাড়ায় এবং রক্তচাপ বাড়ায়। সঠিক ওজন ধরে রাখতে ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা:
ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা উচিত।
৫. উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
নিয়মিত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
৭. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম, অথবা মেডিটেশন করতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. প্রচুর পানি পান ও পর্যাপ্ত ঘুম:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ভালো ঘুম হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাসগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য সহায়ক হবে।