মলদ্বারে ফিস্টুলা কেন হয় চিকিৎসা কি জানুন
ফিস্টুলা একটি শারীরিক অবস্থা, যা সাধারণত একটি অস্বাভাবিক সংযোগ বা প্যাসেজ তৈরি হওয়া বোঝায়। এটি শরীরের দুটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গের মধ্যে, অথবা একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ও শরীরের বাইরের মধ্যে তৈরি হতে পারে। এটি সাধারণত একটি রোগ বা আঘাতের ফলস্বরূপ হয় এবং চিকিৎসা ছাড়া সাধারণ অবস্থায় সেরে ওঠে না।
• ফিস্টুলার প্রকারভেদ
ফিস্টুলার ধরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন:
• আনাল ফিস্টুলা (Anal Fistula): মলদ্বারের কাছে একটি সংযোগ তৈরি হয়।
• আন্ত্রিক ফিস্টুলা (Intestinal Fistula): অন্ত্রের ভেতর বা অন্য অঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়।
• ভেজাইনা ফিস্টুলা (Vesicovaginal Fistula): প্রস্রাব ও যোনির মধ্যে সংযোগ।
• অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা (Obstetric Fistula): প্রসবজনিত কারণে যোনি, মলদ্বার ও মূত্রাশয়ের মধ্যে সংযোগ।
ফিস্টুলার কারণসমূহ:
• ফিস্টুলা হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
• সংক্রমণ (Infection): দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ফিস্টুলা সৃষ্টি করতে পারে।
• আঘাত বা সার্জারি: যেকোনো অস্ত্রোপচারের পর যদি সঠিকভাবে আরোগ্য না ঘটে।
প্রসবজনিত জটিলতা: দীর্ঘ সময় প্রসবের চাপে টিস্যু নষ্ট হয়ে গেলে।
• আন্ত্রিক প্রদাহজনিত রোগ: যেমন ক্রোন্স ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস।
টিউমার বা ক্যান্সার: কিছু ক্যান্সারও ফিস্টুলার কারণ হতে পারে।
লক্ষণ:
ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্তক্ষরণ।
ত্বকের জ্বালা বা প্রদাহ।
মলদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি।
মলত্যাগে অসুবিধা।
ফিস্টুলার সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে এর অবস্থান, আকার এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। ফিস্টুলা সাধারণত নিজে থেকে সেরে ওঠে না, তাই এটি নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিচে ফিস্টুলার চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো:
১. প্রাথমিক চিকিৎসা
ফিস্টুলা নির্ণয়ের পর প্রাথমিকভাবে কিছু ব্যবস্থার মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা হয়:
অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
ড্রেনেজ: পুঁজ বা তরল নির্গত করার জন্য সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার করা।
ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা হয়।
২. সার্জারি (অস্ত্রোপচার)
ফিস্টুলা নিরাময়ের প্রধান উপায় হলো অস্ত্রোপচার।
এর মধ্যে রয়েছে:
(ক) ফিস্টুলোটমি (Fistulotomy)
ফিস্টুলা প্যাসেজ খুলে দেওয়া হয় এবং এটি পরিষ্কার করা হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকর পদ্ধতি।
সাধারণত ছোট ও সরল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
(খ) সেটন পদ্ধতি (Seton Placement)
ফিস্টুলার মধ্যে একটি চিকন ধাগা (সেটন) রাখা হয়।
এটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ধীরে ধীরে ফিস্টুলা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
(গ) অ্যাডভান্সমেন্ট ফ্ল্যাপ (Advancement Flap Surgery)
জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
ফিস্টুলা বন্ধ করতে টিস্যুর একটি ফ্ল্যাপ ব্যবহার করা হয়।
(ঘ) লিগাসুর পদ্ধতি (Ligation of Inter-Sphincteric Fistula Tract, LIFT)
বিশেষভাবে জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
এটি কার্যকর এবং তুলনামূলক কম জটিল পদ্ধতি।
(ঙ) ফিস্টুলা প্লাগ (Fistula Plug)
বায়োডেগ্রেডেবল (জৈবভঙ্গুর) প্লাগ ব্যবহার করে ফিস্টুলা বন্ধ করা হয়। সাধারণত সহজ ও মধ্যম জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে কার্যকর।
৩. লেজার থেরাপি
আধুনিক লেজার পদ্ধতিতে ফিস্টুলা বন্ধ করা যায়।
এটি একটি কম ব্যথাযুক্ত এবং দ্রুত সেরে ওঠার পদ্ধতি।
৪. জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস
ফিস্টুলার চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনধারা পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ:
পানি এবং আঁশযুক্ত খাবার: কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?
ফিস্টুলার চিকিৎসা না করালে এটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে:
দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ।
ফিস্টুলা আরও বড় হওয়া।
ক্যান্সারের ঝুঁকি (দুর্লভ ক্ষেত্রে)।
আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রশ্ন থাকে বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, জানাতে পারেন!
Tags:
স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস