লিভার দুর্বল হওয়া ও লক্ষণ গুলো কি কি


 লিভার দুর্বল হওয়া (লিভার ওয়েকনেস) অনেক কারণে হতে পারে। লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন, পুষ্টি সংরক্ষণ, এবং বিপাকক্রিয়া পরিচালনা করে। লিভার দুর্বল হলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চলুন বিস্তারিত দেখে নিই লিভার দুর্বল হওয়ার কারণগুলো —

১. অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল ও ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া। অতিরিক্ত মিষ্টি ও প্রসেসড ফুড গ্রহণ।
প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লবণ ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া।

২. অ্যালকোহল ও ধূমপান:

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন লিভারের কোষ ধ্বংস করে সিরোসিস সৃষ্টি করতে পারে। ধূমপান লিভারের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে।

৩. ভাইরাল সংক্রমণ:

হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ।দীর্ঘদিন ধরে ভাইরাল ইনফেকশন লিভারকে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৪. ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা:

অতিরিক্ত ওজন ও ফ্যাটি লিভার রোগ (NAFLD) লিভারের কার্যক্ষমতা কমায়।

৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

ব্যথানাশক ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের দীর্ঘদিন ব্যবহার।কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা হারবাল ওষুধ লিভারের ক্ষতি করতে পারে।

৬. অনিদ্রা ও মানসিক চাপ:

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এবং দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ লিভারের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

৭. সংক্রমণ বা প্রদাহ:

লিভারের মধ্যে ফ্যাটি জমে যাওয়া, ফাইব্রোসিস বা সিরোসিসের মতো সমস্যাগুলি।

৮. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ:

দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

৯. পানিশূন্যতা:

পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ায় লিভারের বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধনের ক্ষমতা কমে যায়।

১০. বংশগত সমস্যা:

কিছু জেনেটিক রোগের কারণে লিভার দুর্বল হতে পারে, যেমন উইলসন ডিজিজ বা হেমোক্রোমাটোসিস।

লিভার দুর্বল হওয়ার লক্ষণ:

‌• সহজেই ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা।
• বমি বমি ভাব বা ক্ষুধামন্দা।
• ত্বকে ও চোখে হলুদভাব (জন্ডিস)।
• পেট ফোলা বা ব্যথা।
• গাঢ় রঙের প্রস্রাব ও হালকা রঙের মল।
• ওজন কমে যাওয়া।

লিভার ভালো রাখতে করণীয়:

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
পর্যাপ্ত পানি পান করা।
অ্যালকোহল ও ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
নিয়মিত শরীরচর্চা করা।
ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

আপনার যদি বিশেষ কোনো লক্ষণ থাকে বা আপনি লিভার দুর্বলতার ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে অবশ্যই একজন হেপাটোলজিস্ট বা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নিন।