শিশুদের মোবাইল গেমিং আসক্তি এবং প্রতিকার

 শিশুদের মোবাইল গেমিং আসক্তি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে তারা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাত্রা ও প্রভাব

১. শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি:

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের চাপ (digital eye strain) বৃদ্ধি পায়, যা দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা: শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়ার ফলে শিশুদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা দেখা দিতে পারে।

মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যা: দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকার কারণে ঘাড়, পিঠ ও হাতের ব্যথা হতে পারে।

ঘুমের ব্যাঘাত: অতিরিক্ত গেম খেলার ফলে শিশুদের ঘুমের স্বাভাবিক রুটিন নষ্ট হয়, যা মস্তিষ্কের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

২. মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি:

আসক্তি: মোবাইল গেমের প্রতি আসক্তি শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে তারা অন্য কাজে আগ্রহ হারায়।

মনোযোগ কমে যাওয়া: অতিরিক্ত গেম খেলার ফলে পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

আক্রমণাত্মক আচরণ: অনেক গেমেই সহিংসতা থাকে, যা শিশুদের মধ্যে আক্রমণাত্মক প্রবণতা বাড়াতে পারে।

অবসাদ ও উদ্বেগ: পরাজয়ের ফলে হতাশা এবং দীর্ঘ সময় গেম খেলার কারণে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দিতে পারে।

৩. সামাজিক ও শিক্ষাগত সমস্যা:

পারিবারিক সম্পর্কের দুর্বলতা: অতিরিক্ত গেম খেলার ফলে শিশুরা পরিবারের সঙ্গে সময় কম কাটায়, যা পারিবারিক সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি করে।

স্কুল ও একাডেমিক পারফরম্যান্সের অবনতি: গেমিংয়ের প্রতি আসক্তির কারণে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে যায়, পরীক্ষার ফল খারাপ হতে পারে।

সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি: গেমিংয়ে বেশি সময় ব্যয় করার ফলে শিশুদের বাস্তব জীবনে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

সমাধান ও করণীয়:

স্ক্রিন টাইম সীমিত করা: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলতে না দেওয়া। বিকল্প বিনোদনের সুযোগ তৈরি করা: শিশুদের খেলাধুলা, বই পড়া বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা। পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা শিশুদের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটানো এবং তাদের মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে নজরদারি করা। গেম নির্বাচনে সতর্কতা সহিংস বা আসক্তিকর গেমের পরিবর্তে শিক্ষামূলক গেম খেলতে উৎসাহিত করা। মোটকথা, মোবাইল গেমিং পুরোপুরি নিষিদ্ধ না করে এর ব্যবহারে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যাতে শিশুরা সুস্থ ও সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে।