মুখের গড়ন অনুযায়ী মেকআপ করার জন্য আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে আপনার মুখের আকৃতি (shape) কী ধরনের। সাধারণত মুখের গড়নগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন: গোলাকার, ডিম্বাকৃতি, লম্বাটে, বর্গাকার, হৃৎপিণ্ডাকৃতি বা ত্রিভুজাকার। প্রতিটি গড়নের জন্য আলাদা কৌশলে মেকআপ করতে হয়। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
১. গোলাকার মুখ
কনট্যুরিং: গালের পাশে এবং থুতনির নিচে কনট্যুর ব্যবহার করুন, যাতে মুখটি আরও লম্বা দেখায়।
হাইলাইটিং: নাকের উপরে, কপালের মাঝখানে এবং থুতনিতে হাইলাইট ব্যবহার করুন।
আই মেকআপ: আইলাইনার দিয়ে চোখ বড় করে তুলুন।
২. ডিম্বাকৃতি মুখ
কনট্যুরিং: কপালের পাশে এবং গালের হাড়ে হালকা কনট্যুর দিন। হাইলাইটিং: মুখের মাঝখানে, যেমন নাকের উপরে এবং গালের আপারে হাইলাইট দিন। এই গড়ন বেশ ভারসাম্যপূর্ণ, তাই হালকা মেকআপ করলেই ভালো লাগে।
৩. লম্বাটে মুখ
কনট্যুরিং: কপালের উপরের অংশ এবং থুতনির নিচে কনট্যুর ব্যবহার করুন।
হাইলাইটিং: গালের মাঝখানে হাইলাইট দিন।
লিপস্টিক: গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে মুখকে ভারসাম্যপূর্ণ দেখাতে পারেন।
৪. বর্গাকার মুখ
কনট্যুরিং: কপালের কোনায় এবং চোয়ালের দিকে কনট্যুর দিন। হাইলাইটিং: নাকের উপরে এবং গালের মাঝখানে হাইলাইট দিন। ব্লাশ গালের মাঝখানে ব্লাশ ব্যবহার করুন।
৫. হৃদপিণ্ডাকৃতি মুখ
কনট্যুরিং: কপালের পাশে এবং থুতনির নিচে কনট্যুর দিন।
হাইলাইটিং: গালের আপারে এবং নাকের মাঝখানে হাইলাইট দিন।
লিপস্টিক: উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে মুখের নিচের অংশ ভারসাম্যপূর্ণ করুন।
আরো কিছু টিপস:
আপনার ত্বকের ধরন ও রঙ অনুযায়ী সঠিক ফাউন্ডেশন ও কনসিলার বাছাই করুন।আইব্রোকে মুখের গড়নের সাথে মিলিয়ে আকৃতি দিন।দিনের মেকআপ হালকা রাখুন, আর রাতের মেকআপে একটু বেশি গ্ল্যামার যোগ করুন।
কিভাবে মেকআপ করলে ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে ফোটে:
মেকআপ এমনভাবে করলে তা শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং আপনার ব্যক্তিত্বকেও ফুটিয়ে তুলতে পারে। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো, যা আপনাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখে ব্যক্তিত্বময় এবং আকর্ষণীয় দেখাতে সাহায্য করবে:
১. নিজের স্বাতন্ত্র্যকে গুরুত্ব দিন
প্রথমেই বুঝে নিন, মেকআপের উদ্দেশ্য হলো আপনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরা, সেটি বদলে ফেলা নয়। আপনার ত্বকের ধরন, মুখের গড়ন, এবং পছন্দ অনুযায়ী মেকআপ স্টাইল নির্বাচন করুন।
২. চোখের মেকআপে গুরুত্ব দিন (Eyes Speak Personality)
চোখকে বলা হয় "মনের জানালা"। সুতরাং, চোখের মেকআপে যত্নশীল হন। দিনের বেলায় ন্যাচারাল আইশ্যাডো বা হালকা কাজল ব্যবহার করুন। রাতে বা উৎসবে স্মোকি আই মেকআপ বা রঙিন আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। আইল্যাশ কার্লার বা মাশকারা দিয়ে চোখকে আরও উজ্জ্বল এবং গভীর দেখান।
৩. ঠোঁটের রঙে আপনার শক্তি প্রকাশ করুন (Lipstick Reflects Confidence)
লাল রঙের লিপস্টিক আত্মবিশ্বাস ও শক্তি প্রকাশ করে। এটি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য মানানসই। হালকা পিচ বা ন্যুড শেড ব্যবহার করলে এটি আপনাকে সহজ এবং বন্ধুসুলভ দেখাবে।অফিস বা প্রাত্যহিক জীবনে ন্যাচারাল বা সফট ম্যাট লিপস্টিক ব্যক্তিত্বের ভারসাম্য বজায় রাখে।
৪. ত্বক প্রাকৃতিক রাখুন (Natural Base)
হালকা ফাউন্ডেশন ও কনসিলার ব্যবহার করুন, যাতে ত্বকের প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকে। বেশি পরিমাণ পাউডার বা ভারী মেকআপ ব্যবহার করবেন না। ত্বক ভালো রাখলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার মেকআপ সুন্দর লাগবে।
৫. কনট্যুর ও হাইলাইটে ভারসাম্য রাখুন
কনট্যুর দিয়ে মুখের কাঠামো স্পষ্ট করুন, কিন্তু অতিরিক্ত করবেন না।
হাইলাইট দিয়ে মুখের যে অংশকে তুলে ধরতে চান (যেমন গালের হাড়, নাকের সেতু), সেগুলো আলোকিত করুন।
৬. পরিস্থিতি অনুযায়ী মেকআপ করুন
অফিস বা আনুষ্ঠানিক পরিবেশ: হালকা এবং মার্জিত মেকআপ করুন।
উৎসব বা অনুষ্ঠানে: একটু গ্ল্যামারাস লুক আনুন। গ্লিটার বা উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করতে পারেন।
ক্যাজুয়াল আউটিং: ন্যাচারাল লুক রাখুন।
৭. আত্মবিশ্বাস এবং হাসি যোগ করুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনার মেকআপের সাথে আত্মবিশ্বাস রাখা। আপনি যেমনই মেকআপ করুন, নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হাসি এবং ব্যক্তিত্বই আসল শক্তি।
৮. নিজের স্বকীয়তাকে দেখান (Signature Style)
আপনার মেকআপের একটি স্বকীয়তা থাকতে পারে। যেমন চোখে সিগনেচার উইংড আইলাইনার। ঠোঁটে একটি নির্দিষ্ট শেডের লিপস্টিক বা শুধু হালকা ব্লাশার।
৯. অতিরিক্ততা এড়ান
মেকআপের প্রতিটি স্তরে ভারসাম্য রাখুন। চোখ যদি ভারী হয়, তাহলে ঠোঁটের রং হালকা রাখুন। আবার ঠোঁট যদি গাঢ় হয়, তাহলে চোখে হালকা মেকআপ দিন।
১০. ব্যক্তিত্ব প্রকাশের টিপস
আপনার পোশাক এবং মেকআপের মিল থাকা উচিত। ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য নিয়মিত স্কিনকেয়ার করুন।মেকআপের মাধ্যমে আপনার পছন্দ, আত্মবিশ্বাস, এবং স্বকীয়তা ফুটিয়ে তুলুন। আপনার প্রতিদিনের জীবনযাপন এবং পছন্দ অনুযায়ী মেকআপ করতে আরও নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা চাইলে জানান!